Wednesday, September 16, 2015


"সেই ঘোড়া আর তার আরোহী এখন এই শুন্য হাটের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়ায়, যেন এখনো সেখানে হাট, যেন এখনো তাদের মানুষজন ঠেলে-ঠেলেই এগতে হচ্ছে। কিন্তু এখন আর অশ্বারোহী তার ভিক্ষার ঝুলি কাঠির ডগায় ঝুলিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে না। এখন আর ঘোড়াটাকে পেছনে ধাক্কা খাওয়ায় চমকে উঠতে হয় না। আর অস্পষ্ট চাঁদনিতে সেই ঘোড়া আর অশ্বারোহী ঘুমুতে-ঘুমুতে প্রায় নিরজন হাটের অলিগলি দিয়ে পাক খেতে-খেতে যেন মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে বস্তির দিকেই চলেছে। হতে পারে, এই অশ্বারোহী অন্ধ। হতে পারে, এই ঘোড়া অন্ধ। হতে পারে, এই ঘোড়া আর অশ্বারোহী দু-জনেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কোনো এক সময়ে পথ পেয়ে যাবে - তারপর আকাশের পটভূমিতে নদীর চর ও অরণ্যের দূরত্বকে এই ঘোড়া আর তার আরোহী আদিগন্ত প্রান্তরের আলে-আলে কমিয়ে আনবে। আরোহী কখনো মিশে যাবে, কখনো ঘোড়াটির লম্বিত গলাটাই ঝুলে থাকবে, কখনো ঘাড়ের ভিতর গুঁজে যাওয়া মাথা নিয়ে আরোহীর ছায়াটুকু ভেসে থাকবে, কখনো ঘোড়ার পিছনটা একটা ভাঙা মেশিনের মত লাফাতে-লাফাতে যাবে - যেন কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে, কখনো নদীর দুই পাড়ে ছায়া - মাঝখানের জলটুকুতে ওদের ছায়া, কখনো জলহীন নদীখাতটুকু যেন ঘোড়ার চারটি পায়ের ভঙ্গুরতা থেকে উজিয়ে গেছে, কখনো নদীর বাঁধের ওপর ছায়ায়-আলোয়, নদীর ভিতর-চরে বালিয়াড়ি ভেঙে, বা অরণ্যের কোনো গাছতলায়। এখন মধ্যরাত্রিতে এই শূন্য হাটে বোঝা যায় না, এই ঘোড়া ও তার আরোহীর কোথাও একটা অবতরণ আছে।"     


_________________________
'শেষহাটি থেকে হাট শেষ'
 

No comments:

Post a Comment

Your Thoughts ...