Saturday, January 16, 2016

সংক্রান্তি

দিন যায় মাস যায় বছর যায়, দ্রুত চলে যায় বছরের পর বছর, ঘাটাল আছে সেই ঘাটালেই। পাড়ায় পাড়ায় বিউটি পারলার, দেব আসে, শুভশ্রী আসে উদবোধনে। কফি শপ ফার্স্ট ফুড সেন্টার, এমনকি মল কালচারও শুরু হয়ে গেছে কবে! কিন্তু ঘাটালের সেই আদি অকৃত্রিম মকর সংক্রান্তির মেলা আর তাকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ উল্লাস ঠিক রয়ে গেছে আমার ছোটবেলায় দেখা সেই চিরাচরিত পৌষমেলার মতই।
মকরবাহিনী গঙ্গা বসে গেছেন নদীপারের মন্ডপে। তাকে ঘিরে নদীর দুপারে সারি সারি অস্থায়ী দোকান সাজছে, ভোরের মকর স্নানের আগেই প্রস্তুত হয়ে যাবে। চূড় করা নারকেলের পশরা সাজিয়ে মধুমাঝির নৌকাখানি বাঁধা আছে শীলাবতীর ঘাটে, একের পর এক নৌকো এসে লাগছে কিনারায়। হাড়হিম ঠান্ডায় গমগম করছে ঘাটাল। ওপারের মাইক বক্স এপারের বক্সের আওয়াজকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। কীর্তন থেকে লোকসঙ্গীত, বাংলা থেকে হিন্দী গানের মিলিজুলি চিৎকারে ছিন্নভিন্ন শেষ পৌষের রাত। এইভাবেই সমস্তরাত আজ জেগে থাকবে ঘাটাল। আর ভোরের আলো না ফুটতে টুপটুপ দেবে ডুব টুসু মাথায় বউটি! বউগুলি মেয়েগুলি। কাঁদো কাঁদো মুখে মাসভর আগলে রাখা টুসু মেয়েকে নদীতে ভাসিয়ে পাড়ে আসন পেতে বসা সাবিত্রী সত্যবান কে গড় হয়ে প্রণাম পুজো। নদীঘাটে কীর্তন, মাইকে 'তুম সে মিল কর', বাতাসে গরম মুগের জিলিপি তিলকূটের গন্ধ। ছেলেমেয়ের হাতে গরম জিলিপি পাঁপড় ধরিয়ে দিয়ে বউ কাঁচের চূড়ি, লোহার চূলো , বেতের বোনা ধামা কুলো কিনতে ব্যস্ত। ঘাটালের আকাশে তখন ঘুড়ি ঘুড়ি, উড়ছে কাটছে। আর স্থলে জলে হো হো চিৎকার। ঝপাঝপ শীলাবতীতে লাফিয়ে পড়ছে ছেলের দল।
ছোটবেলায় ওইরকম টুসু মাথায় গান গেয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে যেত মেয়েরা, সেই সুরে ঘুম ভেঙ্গে তড়াক করে উঠে বসতুম। কুমোর পাড়ার যে মেয়েটি বছরভর আমাদের সাহায্য করে বাড়ির কাজে, এই দুদিন ছুটি নিয়ে তার বাবার সংগে রাস্তার দুধারে বসা মেলায় যেত তাদের পশরা নিয়ে। ফুলপাতা আঁকা মাটির টব, লক্ষ্মীর পা আঁকা হাঁড়ি সরা, ধুনুচি কত কি গড়ত এই মেলায় কুমোর জ্যেঠু আর জ্যেঠি মিলে। ভোর থেকে মকরের আয়োজনে ব্যস্ত মায়ের চোখ এড়িয়ে আমরা দুই বোন পালাতুম তাদের কাছে। মকরস্নান সেরে টুসুমেয়েরা ফিরত আর পাটকরা থলের বস্তার আসনে হাঁটু মুড়ে বসে আমরা ঠিক কুমোর জ্যেঠুর মত করে হাঁক দিতুম, 'লক্ষ্মীর ভাঁড় চার আনা চার আনা!' আর সম্ভাব্য ক্রেতার মুখে তাকিয়ে থাকতুম তৃষিতের মত, গভীর উৎকন্ঠা নিয়ে দেখতুম জ্যেঠুর শূন্য নারকেল তেলের মুখ কাটা পয়সা রাখার টিনের কৌ্টোটি ভরে উঠতে কত বাকি!
বাড়ি থেকে লোক এসে বকাবকি করে ধরে নিয়ে যেত এবং তারপর কি হত সেসব অন্য গল্প। কিন্তু আমার লক্ষ্মীর ভাঁড়ে ওই দিনগুলি কি অমূল্য সঞ্চয় যে... চলে যাওয়া দিনের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে আরো বেশি করে বুঝতে পারি ।



পাপিয়া ভট্টাচার্য

___________________________



লাইক ছাড়া আর কোনও সিস্টেম নাই রে, চমকে উঠি। কথা হচ্ছিল মোল্লা সাগরের সঙ্গে পিঠে পার্বণ, অনাহার ও ডায়াবেটিস নিয়ে। পিঠে নিয়ে কথা বলার আজ একমাত্র দিন। সময় রোজ হয়না, আজ সংক্রান্তি। মাকে মনে পড়ে, বাংলাদেশকেও। সকাল থেকে চারপাশে খুলনা খুলনা গন্ধ। বাসেরা এখন নিরুদ্দেশে যাবে, মহাভারত এখন গঙ্গাসাগরে। সেঁকা খোলায় পিঠে পুড়ছে। মফঃস্বলের এই নরম রোদে বড়ি শুকোচ্ছে শাড়িময়। এখানে স্নান ওখানে টুসু। পাপিয়াদি ফেবুতে পোষ্ট দিয়েছে আকণ্ঠ শিলাবতী, মাইক, হট্টগোল। তবু মন নাচে, পাহাড়ের গা ...দিয়ে আমি যেন কোথাও যাইনি ঝর্না হয়ে এ যাবতকাল, মহুয়া আক্রান্ত-টুসু হাঁস পিঠা আর আমি একাকি বিমুগ্ধ জ্যোৎস্না। টুসুপাখি হই আমি নদীবৎ, প্রসেঞ্জিৎ (মহাপাত্র) দের বাড়ি দেখি বাঁকুড়ার কোনও প্রান্তে সহজপাঠের মত আঁকা, নদী পেরিয়ে ব্লেন্ডারস খাওয়ার মত ছাদ থেকে লাল-নীল বমি আমি দেখি যেই মত চিকচিক করে চোখ, ম্যাকের ল্যাপটপ জুড়ে নাচছে ক্রিন সেভার, ফিরে আসা দরকার। আমার তো ব্যস্ততায় দিন কেটে যায়- শিলাজিৎ সুলভ। পাখির লড়াই দেখতে যাওয়ার কথা চলছে গত দুই তিন বছর, প্রতিবারই প্ল্যান হয় বাপ্পাদার সঙ্গে, কিন্তু যাওয়া হয় না। দিন চলে যায়, মাহফুজ ফোন করেন জাপান থেকে,সব ব্যবস্থা রেডি, যান চলে যান গোপীতে। যাওয়া হয়না, আমি গোপিনীদের সঙ্গে দিন কাটাই। কর্মব্যস্ত।
কিউটি কাকলীদের একজিবিশন কাল থেকে শুরু হয়েছে, আকাদেমিতে। একদল মেয়ে, বাংলায় লিখলে চোদ্দোজন এসেছে কলাভবন থেকে, প্রিন্ট শীর্ষক এক প্রকাণ্ড একজিবিশন। সবাই বাইরের, অনেকেই বাংলাদেশি, কলকাতার শহীদ মিনারের আশেপাশে হাতির পুকুর বিনয় ভবন আর শ্যামবাটিতে তারা হাঁটতে হাঁটতে এমনিই কাটিয়ে দেবে সারা রাত, যৌবন স্ফুলিঙতর। অথবা কোনও যাদুকর শাহরুখ, রুখ বাবা রুখ খান নন্দন চত্বরে এলে, এই পচা কলকাতায় আজ সন্ধ্যায় ঝাঁপ বন্ধ হলে অনেকেই নেমে পড়তে পারে উড়ানখেলার কোর্টে, তু হ্যা কর আর না কর তু হ্যায় আসলি কিরণ, রাত বাড়লে কিরণ বাড়ে বলার জন্য কে সি পালকে আজ আর প্রয়োজন নেই। মুনের সঙ্গে কথা হয়েছে দুইবার কাল। কিন্তু যেতে পারিনি। কাজ শেষ করে খালাসিটোলা ঘুরে যখন ফোন করলাম তখন নাকি সব বন্ধ হয়ে গেছে। গাড়িতে বসে মোবাইলে দেখি কিউটি নানা পোষ্ট দিয়েছে। ফ্রেমায়িত ছবি, শাড়ি পরে ইনিয়ে বিনিয়ে, মোকাম্বোর খাওয়ারের থালা সারিসারি, আরও সব ছিল যা আজকাল আর মনে থাকে না। মুন ফোনে বায়না করেছে, একদিন কুমড়ো ফুলের বড়া খাওয়ার, তার ভাষায়, কুমড়া ফুলের কড়কড়া ভাজি। মুখে বলি, মুন খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে রে, মনে মনে লাইক দিই। আর তো কিছু নেই বেঁচে। সিস্টেম।


সুমেরু মুখোপাধ্যায়

_________________________


পরকুলের মেলাতে যাব
টুসু গানে মন মজাব
কাঁসাই লদীর কইরব গ জল পান
মনটা ক্যামন কইরছে য্যে আনচান।

 
ছবিঃ দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায়
 
____________________________
 
 

পৌষের আঙিনায়

 


















 
 
ছবিঃ শেখর দাস
__________________________
 
 
নুনেতে ভাতেতে
 




 
 
 
ছবিঃ অনার্য তাপস

___________________________
 
 

আজ গঙ্গাসাগর মেলায় সবাই পুণ্যস্নান করছেন! কপিল মুনির আশ্রমে পুজোটুজো দিয়েছেন। কিন্তু এই পূণ্যাত্মাদের যদি জানানো যেত যে, শ্রী কপিল মুনি নিজেই পাপ-পূণ্য, ইহকাল-পরকাল ইত্যাদিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। সাংখ্য দর্শনের মূল প্রবক্তা কপিল এবং তার পরবর্তীতে আসুরি, পঞ্চশিখাদের মত আদি সাংখ্য দার্শনিকরা সকলেই ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বকে অস্বীকার করেছেন। এবং বহু পরে যখন ঈশ্বরকৃষ্ণ সাংখ্যকারিকা রচনা করছেন সেখানেও ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বকে নাকচ করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বের কোনও প্রমাণ নেই। ত...িনি ধারণার অধিগম্য নন। মূলতঃ পুরুষ ও প্রকৃতিই সাংখ্যে প্রধাণ বিবেচ্য। আর এই দর্শনের লক্ষ্য, মোক্ষলাভ। অবিদ্য বা অজ্ঞানতা থেকেই দূঃখ ও সংসারের বন্ধন তৈরি হয়। বিবেক-জ্ঞানের মাধ্যমে এই দুঃখ পেরিয়ে যাওয়া যায়। ্মানুষের অস্তিত্ত্বকে দূঃখ বলে বর্ণনা করেছে সাংখ্যকারিকা। তবে এই দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে মোক্ষের সন্ধান দরকার। তবে ঈশ্বরপন্থায় মোক্ষ লাভ হয়না। প্রকৃতির ব্যক্ত ও অব্যক্তের সঙ্গে পুরুষ অর্থাৎ জ্ঞানের সংযোগ হলেই মোক্ষ লাভ হয়।

 
 
অতনু সিংহ
 
__________________________


পিঠে-পার্বণ

স্বাদু পিঠের গল্প শোনানোর জন্যে অনেকেই আছেন। আমি বরং বিস্বাদ পিঠের গল্প শোনাই খান দুই তিন। গল্প না, আমার জীবনের ঘটনা।

মা বাড়িতে পিঠেপুলি খুব যে বানাতো সংক্রান্তিতে, তা নয়, মাঝে মাঝে বানাতো হয়তো। তবে তার জন্যে আমাদের পিঠে খাওয়ার অভাববোধ হয়নি কোনোদিন। ছায়ার ঘোমটা মুখে-টানা পাড়াগাঁয় থাকার অনেক সুবিধে, তার মধ্যে একটা হচ্ছে গোটা পাড়াটাই অনেক সময় হতো একটা ফ্যামিলির মত, উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে। তার ওপর বাবা শিক্ষক ছিল, বাবার চেয়ে আমাদের পাড়ায় বয়সে ছোট যারা, বিয়ে করে অনেক দূরের অন্য গ্রাম থেকে বৌ-হয়ে আসা মহিলাগুলো বাদ দিলে বাকি সবাই বাবার ছাত্র। আম জাম কাঁঠাল পেয়ারা কিনে খেতে হতোনা কস্মিনকালে, টিউশানি পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের বাবারাই সাইকেল নিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে বস্তায় করে নামিয়ে দিয়ে যেত আমাদের ঘরে তক্তাপোষের তলায়। সেই ছাত্রছাত্রীরাও অনেকে সেই তক্তাপোষের তলায় লুকিয়ে আমটাম খেতো অনেক সময়। বাবা যখন জিজ্ঞেস করতো, এই ভোলা, বল, নো সুনার হ্যাড আই ওপেন্ড দ্য ডোর এর পর কোন কনজাংশন বসবে, ভোলা তখন গঁ গঁ করতে করতে কী বলতো বোঝা যেত না, তার মুখে তখন আমের রস, এতক্ষণ আঁটি চুষছিলো বিছানার তলায় গিয়ে।

পিঠের বেলায় অতটা না হলেও আশেপাশের বাড়িগুলো থেকে কাকিমা-ঠাকুমারা দিয়ে যেত আমাদের জন্যে। তার সব যে ব্যাপক স্বাদু, তা বলা যায় না। তবে পাটিসাপ্টা, গোকুলপিঠে, ভাজাপিঠে, দুধপুলি বা চন্দ্রপুলি, ভাজাপুলি, চুষির পায়েস, এসব আমি আর আমার বোন খুব মন দিয়ে খেতাম। সরুচাকলি, কাঁচিপোড়া, আলুর বা ডালের পিঠে একটুখানি মুখে দিয়ে সাইড করে দিতাম। খাবার নষ্ট করার মত সংস্থান ছিল না আমাদের। আমরা না খেলে মা অম্লানবদনে আমাদেরগুলো খেয়ে নিত। মা সব সময়েই বাবার থালায় খেতে বসতো, সবার শেষে। বাবা খেয়ে উঠে যেত খুব তাড়াতাড়ি, সেই থালা প্রায় ধোয়া থালার মতোই দেখতে লাগতো, পিপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে-র মতো। চেটেপুটে খেলে নাকি খাওয়া ভাল হজম হয়, আমরা তখন তাই জানতাম। এখন একটু অন্যরকম ব্যাখ্যা দিই নিজেকে। খাওয়ার তুল্য উৎসব তো আর নেই, খাই বলেই বেঁচে থাকি, তাই প্রতিটি খাবারই মহোৎসব, তাকে যোগ্য সম্মান দেওয়া অবশ্যকর্তব্য। আর তার সাথে খাবার নষ্ট না করার মনোবৃত্তিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চেটেপুটে খেয়ে নেওয়া মানে খাবারের শেষ টুকরোটাও গলাধঃকরণ করা, নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংসারে এ ছাড়া উপায়ই বা কী?

তো সেবার আমার ছোটমাসি এসেছিল আমাদের বাড়িতে। মাসির মত আমুদে মহিলা আমার ছোটবেলায় আর দুটো দেখিনি। আমাকে প্রচন্ড ভালবাসতো মাসি। যে কোনো কথাতেই খিলখিলিয়ে হাসি তার মুখে বাঁধা। এ দিদি, সিঙাড়া খাবি, বলেও ফিকফিক করে হাসতো। বাবা সিঙাড়া কিনে আনলে ভেতরের আলু-ফুলকপির পুরটা খেয়ে মাকে খোলাটা ধরিয়ে দিয়ে “দিদি, তুই এগুলো খা” বলে আবার হাসি। মেসোমশাই রেলে চাকরি করতেন। আমি যখন কল্যাণীতে পড়ি তখন কাঁচড়াপাড়ার রেল হাসপাতালে বলতে গেলে আমার চোখের সামনেই মাসি মারা যায় দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে, সে আজও আমি ভুলতে পারিনি। হাসিখুশি মানুষেরা যে কেন ক্ষণজন্মা হয়!

আমি তখন খুব ছোট। মা মাসি আর আমাকে নিয়ে কোথাও বেরিয়েছিল, ফেরার পথে ললিতজ্যেঠুর বাড়ি গেলাম আমরা। ললিতজ্যেঠু আমাদের মাজদিয়া স্কুলের শিক্ষক, বাবার সহকর্মী, আমি অবশ্য তখনো হাইস্কুলে উঠিনি। ললিতজ্যেঠুরা থাকতেন ইস্কুলের খুব কাছেই এক ভাড়া বাড়িতে। আমরাও বোধ হয় তখন ভাড়া বাড়িতে থাকতাম, অথবা হয়ত নিজেদের বাড়ি উঠে গেছি সদ্য, দু জায়গা থেকেই ললিতজ্যেঠুর সেই বাড়ি পাঁচ সাত মিনিটের বেশি দূরের না। ললিতজ্যেঠুর মা কাঠ বাঙাল, তার ভাষা মা বুঝতেই হিমশিম খাচ্ছে, আমি তো কোন ছার। মাসি আমার দিকে তাকাচ্ছে আর ফ্যাক ফ্যাক করে হাসছে। বেশ অনেকক্ষণ পরে ললিতজ্যেঠুর মা আমাদের জন্যে বাটি করে কী যেন নিয়ে এলেন। বললেন – পিঠা বানাইসিলাম, খাও। মা বললো, এই নে হীরা, পাটিসাপ্টা। আমার চোখ চকচক করে উঠলো। হীরামাসি একটুখানি মুখে দিয়েই মুখটা চিরতা গেলার মত করে বললো, তাই? বলে আর এক কামড় দিলো। তাতেও মুখের ভাব পাল্টালো না। তৃতীয় কামড়েও উদ্দিষ্ট বস্তুটি খুঁজে না পেয়ে মাকে বলল, এ দিদি, ভেতরে পুর কই? বলেই আবার হাসি।

সমস্ত পাটিসাপ্টার ভাঁজ খুলে তন্নতন্ন করে খুঁজেও আমরা পুর আবিষ্কার করতে পারলাম না। মাসি আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এ মিঠু, পাটিসাপ্টা খাবি? (ফিক ফিক) তারপরে আমার ওপর দয়া হলো বোধ হয়, বললো, না রে দিদি, তুইই খা পাটিসাপ্টা (ফ্যাক ফ্যাক)।

পিঠে খেতে আমরা যেতাম পিসির বাড়ি আড়ংঘাটায়। দুই পিসি, দুজনেই অল্পবয়সে বিধবা, বাবার পিসতুতো দিদি। এই পিসিদের বাড়ি্তেই বাবা মানুষ হয়েছে, পিসিরা তাদের ভাইকে আর তার ছেলেকে, মানে আমাকে, খুবই ভালবাসে। কিন্তু যাদের নিজেদেরই অন্নসংস্থানের সমস্যা, তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একটু অন্যরকম। পিসিরা বাড়িতে হাঁস মুরগী ছাগল এসব পালতো। তাদের সব আলাদা আলাদা নাম। আমরা গেলে বেশ মাসখানেক থাকতাম। সাইকেলের চাকার মেটালিক রিঙের গর্তে একটা গাছের ডালের ডান্ডা ঠেকিয়ে সেটা ঠেলতে ঠেলতে সারা পাড়া ঘুরে বেড়ানো ছিল আমাদের খেলা, সেটুকু পেলেই আমাদের আনন্দের অবধি ছিল না। বইটই পড়তে বসার জন্যে মা পীড়াপীড়ি করতো না ঐ কটা দিন, প্রতিদিন শুধু হাতের লেখা বঙ্গলিপি খাতার একপাতা লেখা হলেই চলতো। আমরা যেদিন ফিরতাম, তার ঠিক আগের দিন পিসিরা ওদের হাঁস মুরগীর স্টক থেকে একটা আমাদের জন্যে জবাই করে তেল মশলা দিয়ে রান্না করতো। এরা ছিল পিসিদের ফ্যামিলির অংশই প্রায়, হাঁসেরা চরতে যেত পাশের পুকুরে, সারাদিন থাকতো সেখানে, সন্ধ্যে হলে আমরা গিয়ে চই চই করে ডাক দিলেই জল ছেড়ে উঠে হেলেদুলে আমাদের আগে আগে বাড়ি চলে আসতো। কত কষ্টে এদের বলি দিতো পিসিরা ভাবলে কান্না লাগে এখন।

মাংস না, পিঠের কথা হচ্ছিল। শীতের দিনে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়লে পিসির হেঁসেলে ছ্যাঁক ছ্যাঁক শব্দ উঠতো। মা-ও থাকতো সেখানে। আমি মাঝে মাঝে উঁকি মারলে পিসি বলতো, ও মিঠু, দ্যাখ দেখি বাবা, শেয়ালটা এলো কিনা। কোথায় শেয়াল, কেন শেয়াল, এসব না বুঝে আমরা অন্ধকারে শেয়াল খুঁজতে যেতাম। খুঁজে খুঁজে কিচ্ছু না পেয়ে এসে বলতাম, ও পিসি, কোথায় শেয়াল? পিসি বলতো, দেখিস নি? এই যে এক্ষুণি এখানে মুখ বাড়িয়ে হুয়া হুয়া করছিল। তাড়া তাড়া, না হলে সব পিঠে খেয়ে যাবে শেয়ালে। হাঁস মুরগী না খেয়ে পিসির পিঠে খেতে আসবে কেন শেয়ালে, তা বোঝার বুদ্ধি ছিল না আমাদের, তাই আর এক রাউন্ড শেয়াল খুঁজতে বেরোতাম, বলতাম, টর্চ দাও। পিসি বলতো, ও মা, টর্চ কী রে, শেয়ালের চোখ তো জ্বলজ্বল করে, তুই অমনিই দেখতে পাবি, যা যা।

পিঠে বানানোর ইনিশিয়াল স্টেজে বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখার জন্যে শিয়াল খোঁজানোর এই রীতি সম্ভবত উঠে গেছে।
পিসিরা মাকে ডাকতো বৌ বলে, বলতো, ও বৌ, মিঠুকে পিঠে দাও। বাটিতে ঝোলাগুড়ের সঙ্গে যে বস্তুটি আসতো, সে আমার দু’চক্ষের বিষ। তার নাম কাস্তেপোড়া বা কাঁচিপোড়া, অনেকে বলে আস্কেপিঠে। হুঁদো হুঁদো সাইজ, গায়ে ফুটো ফুটো, মাঝে মাঝে পোড়া পোড়া কালো দাগ, অসম্ভব স্বাদহীন স্টার্চ। ঝোলাগুড়ের সঙ্গে যদিও চলে যায়, তবে ওটার সঙ্গে খেয়ে ঝোলাগুড়ের স্বাদটা নষ্ট করবো কেন, এই ভেবে আমরা শুধু ঝোলাগুড়টাই সাবড়ে দিতাম। আস্কেপিঠে পড়ে থাকতো মার জন্যে। এর চেয়ে সরুচাকলি ভালো, সামান্যই বেশি যদিও।

তবে মা সব খেয়ে নিতো। আমি কোনদিন মাকে বলতে শুনিনি, এই জিনিসটা খারাপ খেতে। অত্যন্ত বিস্বাদ জিনিসও মা খেয়ে নিতে পারতো। আমাদের বলতো, যে যা খেতে দেবে, সোনা মুখ করে খেয়ে নিবি, খাবার জিনিস নষ্ট করতে নেই, মা লক্ষ্মী পাপ দেয়।

শুধু একবারই ...

সেই কথা বলতেই এত গৌরচন্দ্রিকা। আমি তখন মুম্বাইয়ে চাকরি করছি। অফিস ক্যাম্পাসের মধ্যেই দুটো ছ’তলা রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিং, সেখানে বত্রিশটা ফ্যামিলি থাকতে পারে। আমরা থাকি একটার ছ’তলায়। আমাদের ওপরেই বিশাল ছাদ, সেখানে সকালে বা সন্ধ্যায় মনোরম সমুদ্রের হাওয়া খেলা করে। বাড়ির ঠিক ওপর দিয়ে উড়ে যায় শত শত প্লেন। আমার ছেলে তখন নিতান্ত নাবালক, সে আকাশের প্লেন আর রাস্তার ডবল ডেকার বাস দেখে ক্ষণে ক্ষণে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।

মা বাবাকে অনেক বলে কয়েও বোম্বে যাওয়াতে রাজি করানো যাচ্ছিল না, সেবার যেতে রাজি হলো, বেশিদিন থাকবে না, এই কন্ডিশনে। যারা টিউশানি পড়তে আসে, তাদের বঞ্চিত করার উপায় নেই। আমি বললাম, ঠিক আছে। শুভলগ্নে হাজির হলো বাবা-মা।

এখন যেমন আমাদের ব্যাঙ্গালোর রিসার্চ সেন্টারে গাদাগাদা বঙ্গসন্তান, মুম্বাইয়ে তেমন ছিলো না। আমি ছাড়া ঐ বিল্ডিং দুটোতে থাকতো মাত্র আর একটাই বাঙালি ফ্যামিলি। মা বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বলতে পারে না, কাজেই মায়ের পক্ষে বেশ কষ্টকর পরিস্থিতি। আমার একটু খারাপই লাগতে লাগলো।

কিন্তু ঐ যে, গ্রাম্য মানুষের অ্যাডাপ্টেশন একেবারে অন্য ধরণের। রোজ ভোর রাতে আমরা শুনতে পেতাম ছাদে কী সব দুম দুম আওয়াজ হয়। পাত্তা দিই নি। হাজারটা সিকিউরিটি, তারা সবাই সবাইকে চেনে, উটকো লোক ঢুকে পড়া অসম্ভব, সুতরাং চিন্তার কিছু নেই। কদিন পরে মা বললো, ওখানে একটা তামিল বুড়ি চাল কোটে। মা বাবা দুজনেরই ভোরে ওঠা স্বভাব। বাবা উঠে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়, মা উঠে ছাদে। গিয়ে দেখেছে, সেখানে একজন হামান দিস্তায় চাল কুটছে।

উনি হচ্ছেন আমার কলিগ মনোহরের মা। আমার মা’র চেয়ে বয়স্কা, দাঁত-ফোকলা বুড়ি। মা যেমন বাংলা ছাড়া কিছু বলতে পারে না, মনোহরের মারও তামিল একমাত্র সম্বল। আর তোমরা তো জানোই বাংলা আর তামিল কত কাছাকাছি। হুকুম দিলে তামিল করে ফেলি আমরা, কিন্তু তামিলরা তামিলকে আবার তমিড় বলে!

তিন চার দিনের মধ্যেই মা আর মনোহরের মা পরস্পরের প্রিয়সখী হয়ে উঠলো। মা অনর্গল খাঁটি বাংলায় কথা বলে যায়, ফোকলা দাঁতের বুড়ি মনোযোগ দিয়ে শোনে আর মাঝে মাঝে হাসে। তিনিও তমিড় ভাষায় কী সব বলেন, মা শুনে মুন্ডি হিলায়। মনের মিলের সন্ধানে ফেরে যারা, তাদের কাছে ভাষাটা কোনো ব্যবধানই না। হাসির কি বাংলা-তমিড় আছে?

ভোরবেলা উঠেই শুরু হয়ে যায় দুই সখীর হাস্যালাপ, চলে বেলা সাড়ে ন’টা দশটা অবধি।
এক রোব্বারে, মা আমাদের ঘরে ঢুকলো একটু দেরিতে, হাতে একটা বাটি নিয়ে, মুখটা কেমন যেন করে। হাসতে হাসতেই বললো, মিঠু পিঠে খাবি?
তাকিয়ে দেখি মা’র হাতের বাটিতে আড়াইখানা ইডলি।
মা বলেই চললো, এই দ্যাখ, এ হচ্ছে তামিল পিঠে। তামিল তো, এদের সব অন্য রকম, দেখেছিস কী রকম ছোট ছোট পিঠে বানায় এরা! আর ভসভসে পিঠে, আমাদের আস্কেপিঠের মতো আঁটুনি নেই এতে, ফুটো ফুটোও হয় না, পোড়া পোড়াও না। আমাকে নেমন্তন্ন করে নিয়ে গেল ঐ মনোহরের মা দিদি। ওদের ঘরে নিয়ে গিয়ে দিলো তিনপিস এই তামিল পিঠে। আমি ভাবছি কী দিয়ে খাবো, গুড় ফুড় কিছুই দিলো না। তারপর দেখি নীচে কী যেন চটচট করছে। ভাবলাম ওটাই বুঝি তামিল গুড়। ও মা, মুখ দিয়ে দেখি কী টক! এরা টক দিয়ে পিঠে খায়, বুঝলি? আমার তো টক খাওয়া অভ্যেস নেই, আমি কোনো রকমে আধখানা খেয়ে উনাকে বললাম, ও দিদি, আমার ছেলের জন্যে নিয়ে যাই? তো উনি আর একটা বাটি দিয়ে মুখটা ঢেকে দিলেন, তাই নিয়ে এলাম তোর জন্যে। তুই খেয়েছিস এই তামিল পিঠে?

মা অন্য পাড়ায় চলে গেছে সাড়ে সাত মাস হলো। পিঠে মুখে দিলে প্রত্যেকবারই আমার সেই তামিল পিঠের কথা মনে আসে।

পৌষ সংক্রান্তি ২০১৬
অমিতাভ প্রামাণিক


___________________________________


দুখের শিশির কাল, রোগে কষ্টে ভরা,
এত ভঙ্গ বঙ্গদেশে বাঁচা মানে মরা।।
ধনুর তনুর শেষ, মকরের যোগ,
সন্ধিক্ষণে হাঁচি, কাশি, হয় যত রোগ।।
শাঁখ বাজাবার কথা কারও নাই মনে,...
সকলেই সিরিয়াল দেখে গৃহকোণে।।
মেয়েদের নাহি আজ তিনরাত্রি ঘুম,
সকালে পড়েছে তাই ঢুলিবার ধূম।।
অবকাশ নাহি মাত্র এলোচুল বাঁধে,
মাইক্রোওয়েভে কেউ চাওমিন রাঁধে।।
সবই প্রায় থাকে কাঁচা, বাকি যায় পুড়ে,
যদি কেউ খেতে চাও, বালি সেই গুড়ে।।
আলু, তিল, গুড়, ক্ষীর, নারিকেল, আর
হোটেলের থেকে কেনা ‘হোমলি’ খাবার।।
বাড়ী বাড়ী নিমন্ত্রণ, কুটুম্বের মেলা,
সকলেরই প্রিয় কাজ পরের অন্ন গেলা।।
ধন্য ধন্য পল্লীগ্রাম, ধন্য সব লোক,
আজ শুধু পিঠেপুলির গন্ধটাই শোঁক।।


 প্রকল্প ভট্টাচার্য

____________________________________


There is a popular Bengali saying about Ganga Sagar. “Sab Tirtha Bar Bar, Gangasagar Eak Bar”. This cannot be literally transla...ted but loosely it means, All Pilgrimages are perennial but Gangasagar is ephemeral . You can go to all the holy places, but a pilgrimage to Ganga Sagar equals all.

A dip in the ocean, where the Ganga drains into the sea is considered to be of great religious significance particularly on the Makara Sankranti day when the sun makes a transition to Capricorn from Saggitarius and this town becomes home to vast fairs, drawing visitors and recluses and sanyasis from all over India. The village priest leading his horde of devotees chants “Sab Tirtha Bar Bar, Gangasagar Eak Bar”. A dip means redemption from all sins.
 
This place is Sagar Island, on the confluence of the Ganga with the Bay of Bengal. The day “Makar Sankranti” or the last day of the month of Paus which invariably falls on 14th of January.
 
The river Ganga which originates in the Gangotri glacier in the snow clad Himalayas, descends down the mountains, reaches the plains at Haridwar, flows through ancient pilgrimage sites such as Benares and Prayag, and drains into the Bay of Bengal. Sagar Island, at the mouth of the river Hooghly in Bengal,accessed from Diamond Harbor, where the Ganga breaks up into hundreds of streams, and drains into the sea, is honoured as a pilgrimage site, signifying the spot where the ashes of the ancestors of Bhagiratha were purified by the waters of the Ganga.
 
The Kapila Muni temple at this site is the center of worship. Kapil Muni was the son of Kardam Rishi and Daksh's daughter Devahooti. He was Avataar of Vishnu. Kardam Rishi had nine daughters also. After the birth of Kapil, Kardam Muni went to forest for meditation. Later he preached Saankhya Yog to his mother.
 
According to the legend, King Sagara of the Ikshvaku dynasty ruling at Ayodhya in Uttar Pradesh had two queens, Keshani and Sumati, but neither had a child. Sagara performed severe austerities before his wives could produce sons. But whereas Keshani gave birth to a son called Asmajas, Sumati bore 60,000 sons. Sagara performed the Ashwamedha Yagya sacrifice to declare his suzerainty over the neighbouring kingdoms. According to the prevalent custom, the sacrificial horse was let loose and allowed to wander into the neighbouring kingdoms. If the horse was caught, a battle ensued and the outcome decided the winner. The 60,000 sons of Sagara were following the horse when they saw him enter a cavern where sage Kapil Muni was meditating. Not seeing the horse in the cavern, they presumed that Kapila had captured it. They did not kill Kapil Muni as he was a sage but they started disturbing his meditations. Annoyed at being disturbed, Kapil Muni with a curse burnt the 60,000 sons of Sagara.
 
Once he was sitting in Samaadhi in his Aashram, that Raajaa Sagar's 60,000 sons came there in search of their father's Yagya horse. They found it tied with a tree nearby him, so they thought that Kapil Muni had stolen it. They started abusing him. Kapil Muni opened his eyes and all of them were burned to ashes.Then Raajaa Sagar sent his grandson Anshumaan in search of his 60,000 sons. He traced his uncles' footsteps and arrived at Kapil Muni's Aashram. He saw a mound of ashes near his Aashram. He understood everything. He greeted him and came to know the fate of his uncles. He asked him as how he could give them emancipation.
 
Time passed and later Bhagiratha, the great grandson of Sagara, chanced to come across the bones of his dead ancestors. He wanted to perform the shraddha of his ancestors but there was no water available for the ceremony. Agastya having drunk all the waters of the ocean, the country was passing through a severe drought. Bhagiratha prayed to Brahma, the Creator, to end the drought. Brahma asked him to pray to Vishnu, the Preserver, to allow the heavenly Ganga, issuing from His big toe, to come down to earth.
 
Legend has it that, before joining the sea, the Ganga watered the mortal remains of King Sagar’s 60000 sons liberating their souls once and forever. It was standing on the Sagar Island that the mythical Kapil Muni condoned the sins of the sons of King Sagar who had dared to stop the horse blessed at Lord Indra’s Aswamedha Yagna and tied it to a post near his temple. It is this legend that attracts people to this little island in a remote southern corner of West Bengal.
 
The Ganga Sagar Mela starting today is the largest annual assemblage of devotees in India. The greatness of the Mela can be accessed from the fact that over a million pilgrims come from far-flung corners of India and beyond, speaking different languages and belonging to diverse castes and creeds, for a sacred dip at this holy confluence. For this, no invitation is given. No propaganda is carried out and overall no formal organisation exists for carrying out the mela.
 
The journey laced with religious fervour of the pilgrims overcomes all hardships. Kapil Muni ki jai, the din rises above the grinding motors of the launches ferrying the pilgrims across the Ganga and the countless buses plying between Calcutta and Namkhana. The problem of traveling doesn’t deter even the weak and vulnerable. Old people in their eighties, and village women carrying babies and little children in tow are a common sight.The never ending stream of pilgrims keeps pouring in throughout the day and night before the auspicious day and occupies any available space on the sandy beach. They move about the place in groups, many displaying saffron and red flags, identifying the religious Akhara or group they belong to as well as acting as beacon to the members who stray out of the group.
 
People walks to the sound of the bells, blowing conch shells and chanting prayers. Strains of devotional songs can be heard from far and near. And, the ceaseless din of loudspeakers. An array of shops, stacked with heaps of vermilion, rudraksha, colourful beads, conch shells line the pathways. Many a visitor stands wide-eyed before the shops selling everything from food stuff, household utensils to remote controlled toys.
People crowd around the naga sadhus ,naked ascetics without whom the Ganga Sagar mela is incomplete. Sitting naked in little huts near the temple and enjoying a chillum of ganja, cannabis they are also the target of tourists’ camera.

 
While devotees jostle in front of numerous temporary shrines of Hindu deities to pay homage, Kapil Muni’s temple remains the chief attraction. The temple of Kapil Muni, as we see it today, is by no means the spot where the sage meditated. It went under the sea millennium ago followed by the many others built in its place, which subsequently was also swallowed, by the advancing sea.The present one was built only a few decades ago, quite a bit away from the sea. The tall dome of the temple is visible from a distance. In the temple, three images engraved in stone are displayed, the one in the middle is that of Kapil Muni. The sage is seen in a jogasana; his eyes wide open, looking towards the sea with millions of devotees before him. The idols of Ganga and King Sagar flank Kapil Muni and the horse of the sacrificial yagna stands at a distance.
 
The typical Ganga Sagar pilgrim is a country rustic, generally elderly, hardy, remarkably disciplined and fervent in his devotion. His dhoti seldom going below his knees, a cloth bound packet, containing everything needed for survival, on his head. And, of course, his women heavily tattooed and clad in colourful red saris.
 
As the night, pregnant with the auspicious moment, descends, all wait for the precise hour to take the dip. The sandy track to the water’s edge is crowded with people who sit around fires before proceeding for the bath, chanting devotional songs and prayers. The seaside presents a spectacle in the darkness before dawn with the large bonfire lit by the bathers to keep off the cold. At midnight, the high tide drives the pilgrims back. The biting cold wind of mid January from across the sea lashes the bare body. But there is a confidence on their faces and a kind of fire in their eyes. The confidence in God and the fire of earnest faith makes them brave the chill.
 
The stars in the sky have quite a long time to fade when the moment of truth comes. As soon as the priest announces, the auspicious pre-dawn hour, the crowds surge forward to meet the tide with a loud chorus Kapil Muni ki jai and plunge into the sea.


Aloke Kumar

________________________________


 

 
 
 
 

No comments:

Post a Comment

Your Thoughts ...