Wednesday, September 16, 2015

"অন্ধকারটাই প্রধান। মাঝে-মাঝে আলর ছোঁয়া, আবার কোনো-কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে দু-একবার দিগন্ত বা কোনো অন্যমনস্কতায় আকাশ চোখে পড়লে ব্যাপ্ত অন্ধকারটাই দেখা যায়। আলোর নানা বৃত্তেও শুধু উজ্জ্বলতা নয়। কোনো মদেশিয়া রমণীর পিঠে কাপড় দিয়ে বাঁধা বাচ্চার মাথা দোল খায়, ওপরেই জেগে থাকে লাল ও কিছু অস্পষ্ট রঙের বুনো ফুলের ঝাড়, কালো চুলে। কালো মুখ অন্ধকারের সঙ্গে কোন অনির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে গিয়ে মেশে। নাইলনের উজ্জ্বলতা পিছলে যায় কোনো তাগড়া আদিবাসী বুক থেকে। ধনুকের একটা মাথা দেখা যায়। রাজবংশী রমণীর ফোতার ওপরে উঠে আসে নগ্ন হাত, গলা- কাঁধ। অন্ধকারে ঝিলিক দেয় কুচকুচে আদিবাসী রমণীর ঝকঝকে দাঁতের সারি। কোথাও নিষ্ঠুরতা ঘটে যেতে পারে। বটগাছের গুঁড়ির মত ভুয়োদর্শী মোঙ্গলয়েড মুখ চামড়ার অসংখ্য কুঞ্চনে নদীর চরের মত জেগে থাকে। কোথাও জমি চষা হয়ে গেছে। মেদহীন তীব্র পাহাড়ি চিবুকে পার্শ্বমুখের শান। টিলার মাথা থেকে সমতল দেখা যায়। এ হাটের বেচাকেনা শেষে এখন যেন ভিড়েরই মুখ - বহু শত বর্ষের আদিবাসী ঘরানার মুখোশে অলঙ্কৃত সে-মুখময় শুধু বিস্ময় বা বিস্ময়ের অবসান। রেখা, রঙ আর অঙ্গসংস্থানে কোনো নতুনত্ব নেই, একটি মুখোশ থেকে আর-একটি মুখোশ আলাদা করা যায় না, অথচ প্রতিটি মুখোশই আলাদা হয়ে যায় অনিবার্য। এই দীর্ঘ-দীর্ঘ ছায়াসন্নিপাতে সেই মুখোশের ক্ষণিকতা অথচ তার বড় বেশি নির্দিষ্টতায় বিদ্যুচ্চমকিত অরণ্যের আভাস যেন খেলে-খেলে যায়। বা, কখনো, বিদ্যুচ্চমকের জন্য অরণ্যের অন্ধকার প্রতীক্ষা। সেই প্রতীক্ষাতেই নাচের গানে পাহাড়ের প্রতিধ্বনির ক্ষীণতা আসে। একাকী ঢোলে বোল ওঠে। কোন বিস্মৃত নির্ঝর বয়ে যায়। আর এই ভিড়, আর সওদা, আর কেনাবেচা, আর ভিড়, আর সওদার ভেতরে মিশে গিয়েও মিশতে পারে না, ভিড়ের হয়েও ভিড় থেকে যেতে পারে না, আরো একবার মেলায় এসেও যেন হারিয়ে যাওয়া আর ফিরে যাওয়ার মত বিষণ্ণ, আত্মবিস্মৃত, বিচ্ছিন্ন মুখ, মুখ, মুখের সারি। "

_____________
'এই হাটটা কেমন'
 

No comments:

Post a Comment

Your Thoughts ...