Tuesday, September 3, 2013

Of A Visible City #1

(অথবা, শূন্যতা আর হেরে যাওয়ার মাপকাঠি) 

পাতলা ফিনফিনে কাপড়ের প্রান্তে লেগে থাকে বায়বীয় ধূসর। ছিটের থেকে অপরিষ্কার তামাটে আর সস্তা নীলের ডোরাকাটা অনেকটাই ঢলঢলে জামা; সুতোর ভাঁজে বছরভর বিস্বাদের কর্কশতা, ভারী ঘামের গন্ধ। টুনির ক্ষয়িষ্ণু উদ্দমতায় বুকের দুটো খোলা বোতামের ফাঁকে রোমহীন কালচে ছাতির ওপর হলুদ আলো প্রতিফলিত হয়। দুটাকার কচুরির ঝোল কষে লেগে থাকবে, চ্যাটচ্যাটে ঝাল-লাগা সৈন্ধবের স্বাদ, ঘামে, তেলে মোড়া কপাল বলে দিচ্ছে, বিগত কয়েকদিনের মতই সে স্নান করেনি আজও।

একটা সময়ে চায়ের গুমটিঘরেও কথা শুকয়। নিজের অপদার্থতার কথা ভেবেই মুখ মোছে জামার হাতায়, চোখের কালি। অপক্ক বাঁশের খুঁটিটা ধরে ওঠার চেষ্টা, তল খোঁজার তাল। খোঁচাদাড়িও মৃদুছন্দে চেনা কড়িকাঠে ফেরে, দুগাছি শুকনো লাউশাক আর শেষবেলার ওল, উচ্ছে শুয়ে রক্তমাখা নাইলন বাজারথলিতে, অপাংত্তেয়। ভাড়াটের দাবী, ফুটো তেরপলের নকশা আর অনেকক্ষণ চুপ থাকার চিৎকার যেন লেগে থাকে ল্যাম্পপোষ্টের গায়ে সাঁটানো ঝকমকি ফিল্ম   পোস্টারের হিরোর ক্রোধিত গর্জনে-"আমারও কিছু কথা বলার আছে - "। না, অতটা ভদ্র স্পষ্টবাদিতা নয়, প্রেমিকার প্রথম চুম্বনস্বাদের মতই জটিল, ঝড়ে চড়াইয়ের মতই দিকভ্রান্ত, থুতুছেটানো মুখখারাপের আবলুশ উত্তেজনা, সূক্ষ্ম আগেবতাড়নাই সম্বল - ওলটপালট খিস্তিখেউর।

ঘর ফেরা কুকুর চেটে খায় স্তুপাকৃত পচেধরা ভাতের উপরিভাগ, তলায় যেন বিষ, রাস্তার খড়খড়ে ফুটিফাটা, যেখানে জল জমে, মরা শালিকপাখিও। সন্ধের ম্যাগনলিয়ার অরেঞ্জ স্টিকের কমলা রাংতায় নিম্নবিত্ত স্বাদবদল। অনেক কষ্টেও তালাত মামুদের রেকর্ড খুজে না পাওয়ার দুঃখ না কি ছানিপরা চোখের স্থবিরতা, কোনটায় যে মনখারাপ সে প্রশ্ন ভালবাসার সিল্ককাট ফুঁকে চলা বৃদ্ধের সামনে তুলে ধরা সম্ভব নয়; বরং ভাবা উচিত কেন তিনি আজও একদৃষ্টে উত্তর আকাশে চেয়ে থাকেন, শব্দছক মেলান প্রাত্যহিক, এবং ট্রামলাইনে বরাবর কেউ একমনে হেঁটে গেলে স্মিত হাসেন নিসঙ্গঃতায়।  

বৃষ্টির অকালবোধনে শরীরে ঝাঁট লাগে, প্যান্টের গোড়ালিতে দানা দানা জমে গাঢ় ঘনত্ব। তারাও ওপরে উঠতে থাকে, অনির্দিষ্ট ক্ষিপ্ততা। ভোর সাড়ে চারটের মিয়াঁ কি মলহারের চমৎকৃত অশ্রুধারা। কেউ তাকে উঠতে বলেনি, সরে বসতে বলেনি, বলেনি কোথায়-কবে-কখনের গোলোকধাঁধা পেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে। দাঁড়কাকগুলো নিঃস্ব হয়ে পথে দাঁড়িয়েছিল, শব্দ করেনি, কিছু শোনা ও যায়নি। সাইনবোর্ডের, ইউরিনালের আলোরা চুপ থাকেনি, একটানা বকে গেছে মদ্যপ, কেউ শুতেও বলেনি ওদের। শেষ ট্রেন আসেনি, কাদালাগা চোখের পাতার শ্বাস, ঝিমধরা ঝিঁঝিঁ ধুধুল, লতার আড়াল থেকে সঙ্গত দেবে বিস্তীর্ণ ফুটপাথ জড়িয়ে সোহাগ করা বিহারি মজুরকে, যে আগের রাতে ঠায়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিল বন্ধ লোহার গেটের কঠিন আস্তারন। রং বদলাবে ঝিরঝিরি, অপলকে চমকে উঠবে উল্লাস, কাঁচে মুখ চাপবে, অবদমিত, রগের দপদপ। চাকার দাগ, পানের পিক, পেরেকের জং, মাসিকের প্যাড, পাকোড়ার হাড়, বিদেশের মদ, জীবনানন্দের লাশ। ওদের কেউ থাকতে বলেনি, ঘুরে তাকাতে বলেনি, যেমনটি চলছিল তেমনই - নিরবিছিন্ন, আলস্যতারল্য, মৃত্যুর নির্যাস।  

দিনবদিনের পোড়া দুধের সর যেমন ভগ্নপ্রায় কেটলি থেকে প্রাণপণ অবিছ্যেদ, তেমনি বৃষ্টিরাতের রুপকথা আর নিকশকালো শহরে আলোকিত বাদানুবাদ। সিকনি গড়ানো জ্বর, দ্রুতগতির হেডলাইট, কাঙালের অনিদ্রাযাপন। প্রাচীন পুকুরজলে কালের গভীর শ্যাওলার মতই শুষে নেবে সব, নিয়মমাফিক, এ শহর। 

No comments:

Post a Comment

Your Thoughts ...