Monday, August 12, 2019

খিজিরের হাতে ট্রে। সবুজ ও লাল সুতায় নিষ্কন্টক দল পাতা ও গোলাপ ফুল সেলাই করা হলুদ রুমালে ঢাকা। খিজির একটু দাঁড়ায়, 'কৈ যান? মাহাজনে নাশতা পাঠাইয়া দিছে, খাইয়া একেবারে বারান!' বাঁয়ে ঘুরে রঞ্জুদের ঘরে যেতে যেতে বলে, 'আপনে উপরে গিয়া কামরায় বহেন। ব্যাকটি ভাড়াইটারে দিয়া আমি আইতাছি।'
ওসমানের ঘরের দরজার চাবি রঞ্জুদের ঘরে। রানুকে নতুন বিবাহিত বন্ধু তার স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে এলে ওরা সবাই মিলে ছাদে উঠে ছবি তুলবে। ওসমান রঞ্জুদের দরজায় টোকা দিয়ে চাবি নিলো। 
ট্রে থেকে সিমাই ও মোরগ পোলাওয়ের ডিশ তুলে নিতে নিতে ওসমান বলে, 'আমার তো প্লেট মোটে একটা। এতোসব রাখি কোথায়?'
'রাখেন প্যাটের মইদ্যে। আমি এট্টু বহি, আপনে খান!' এদিক ওদিক তাকিয়ে খিজির ছাদের দিকের দরজায় চৌকাঠে বসে পরে।  
'আরে আরে ওখানে বসছো কেন ? বিছানায় বসো, বিছানায় বসো।' ওসমানের ব্যস্ততাকে আমল না দিয়ে খিজির হাঁটু ভেঙে গুছিয়ে বসে।  
মোরগ পোলাওয়ের স্বচ্ছ ও পাতলা ধোঁয়ার সুবাসে আত্মসমর্পণ করতে করতে ওসমান বলে, 'এতো! রঞ্জুদের ওখানে হেভি হয়ে গেছে।'
'আরে ঈদের দিন ভি মাইপা খাইবেন? ঈদ উদ মনে লয় মানেন না, না? নমাজ ভি পড়েন নাই?'
'ভোরবেলা ঠিকমতো ঘুম ভাঙলো না,' ওসমান আমতা আমতা করে।  
'নাহাইছেন মালুম হয়। '
'হ্যাঁ। চৌবাচ্চার পানি যা ঠান্ডা। ' 
'ভালো করছেন। ঈদের দিন উইঠা নাহাইয়া উহাইয়া সাফসুতরো হইয়া নমাজ পড়তে যাইবেন। রিশতাগো লগে মিলবেন, পড়শিগো লগে মিলবেন! তবে না মোসলমানের পোলা!'
ঈদের দিন খিজির আলি মুসলমানের সন্তান হওয়ার জন্যে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালায়। আজ খুব ভোরে রাত থাকতে উঠে রাস্তার কোলে ৫৭০ সাবান দিয়ে পা কচলে গোসল করেছে। গায়ে চড়িয়েছে আলাউদ্দিন মিয়ার দেয়া বুকে সাদা সুতার মিহি কাজ করা আদ্দির কল্লিদার পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির ডান হাতে কব্জির কাছে একটু ছেঁড়া। তা হোক। গুটিয়ে নিলেই হলো।    
চিলেকোঠার সেপাই । আখতারুজ্জামান ইলিয়াস 

No comments:

Post a Comment

Your Thoughts ...