Monday, August 12, 2013

চুপ, একদম

ব্যাপারটা কোন আইভরি-টাওয়ার টেনিদা-নাক হওয়া নয়, বা বুর্জোয়া-বাদানুবাদ, "হই তু উরা, তু আমরা নৈ ক্যান" এর ফোড়নে সাঁতলানো টাইপ, রাদার নুন্যতম শিষ্টতার।

শেষ বসন্তে আমাদের গায়ে বিজগুড়ি বেরলেও তাতে কালচারের ছাপ থাকে, স্বাভাবিক। ছেতরে ভেদবমি হলেও তাতে শৈল্পিক নকশা লক্ষণীয়। শনিবার সন্ধ্যেতে বাথরুমটা পরিষ্কার করার দায় পরলেও ঋতুপর্ণের   ওপর জোর আলোচনা হবে শুনেছি, স্যার রবিন নাথন কে নিয়ে সিনেমা করেছে, প্রচুর গান শুনিয়েছে ঐ ফিলুমে, মানেই জোর কেত।  মালটা তার ওপর শেষদিকে মেয়ে সাজত, মানে যৌনতার গরমগরম চাকুমচুকুম। ভায়েরাভাই কে কল লাগাই, অনেকদিন ঘুরতে যাওয়া হইনি, বউ চিল্লাছে, বাচ্চাগুলো সাউথসিটির এসি খেয়ে ক্লান্ত।

কি বললি? ফ্রি? মানে কিসসু নেবে না?
তাপ্পর চোখের বালি ও বিনি পয়সায় দেখাবে?! বলিসকি!
পাঁচটায় শুরু, ধুত ছটার আগে শুরুই হবে না! ঢুকতে দেবে না মানে?! ফ্রি তে দেকাচছে মানে মাথা কিনে নিয়েছে নাকি?!
তাই শুরু হয়ে যাওয়ার পঞ্চান্ন মিনিট বাদেও ঢুকে সিটের জন্যে হলের স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে ঝগড়া করব, আলবাত। ওখানে বসব না, বেশি ঠাণ্ডা লাগছে, এখান থেকে স্টেজের বাঁদিকের বুড়োর কান ছাড়া কিছুই তো দেখতে পাচ্ছিনে।
আরে সরুন দাদা, বাচ্চাটা টয়লেট লেগেছে।  ও দাদ্দা, কলছার কত্তে এইছি। ছেলেকে আমাদের ঐতিহ্য্ সেকাতে হবে নাহ? দেক বাব্বা ঐ টাকমাথাটা দারুন কাঁদিয়েছিল, বিসাল সিনেমা করে (ছেলে না মেয়ে জিজ্ঞেস করবিনে, হারগিস)।
শুনছো, দোসর অত্যন্ত ভালো, যাকে বলে, সুন্দর বই। আরও কয়েকটা ভালো বানিয়েছিল, ঠিক মনে পরছেনা। ও অঞ্জনদা, অনেক তো বকলেন, এবার বেলাবোস শোনান না! এই রে, ইংরিজি তে বলে নাকি, বিরবির কিন্তুকিন্তু।
আর আমি ভাই বিসা-আ-আ-আ-ল ব্যস্ত লোক, হু হু, সামলে। তোকে শালা দুনিয়ার রিংটোন শুনিয়েই ছাড়ব -  শ্রীহনুমান, পিটবুল, শ্যামাসংগীত, ডিস্ক হুরুমতাল - গ্যাসবুক হয়েছে, মাকে হলুদ ট্যাবলেটটা খাইয়ে দাও, মাল ডেলিভার হয়ে গেছে স্যার। এই ফাঁকে জোরসে ম্যাসেজ করি তো কতগুলো, ডেলিভারি টোনের ও কি বাহার, আরে আমি ভাই বিসা-আ-আ-আ-ল ব্যস্ত লোক, বিসা-আ-আ-আ-ল।
আবার ও কি, বলে নাকি বাঙালির প্রান্তিক যৌনতা  সম্পর্কে বেসিক আইডিয়াই নাকি নেই? সেক্স আবার জানার বিষয় নাকি! ও তো খালি করতে হয়। তাও যদি বুঝতুম রেগুলার ব্যাপারটা - বাদ দিন, কাটান। ঋতুর ফ্লিম নাকি বুজিনি, ধুত্তোর, রাইমাকে দেখে সোহাগ করিনি নাকি!
এই রে, ওইদিকটা ফাঁকা হয়েছে, ধর ধর জলদি সিট ধর, রুমাল পেতে রাখ, জলদি।

 না, উত্তেজনা থাকা খারাপ বলছি না, সুযোগের ব্যবহার সবসময়েই করা উচিত, ফ্রি'র আরও বেশি। পরিবারের সাথে দল বেঁধে উল্লাস, একশোবার। পরবর্তী প্রজন্মকে আপনি ছাড়া কে শেখাতে পারবে, তুমুল দায় বর্তায়! এলিটিজমএর রোয়াব দেকাছিন্না। কথাটা, আগেই বলেছি, হল শিষ্টাচারের। হলে ঢুকে প্লাস্টিকের মোড়ক ছাড়িয়ে আওয়াজ করে কামড় মারা, ফোন বন্ধ রাখার দায় না নেওয়া, পাবলিক স্পেসে ন্যূনতম সৌজন্যবোধ টুকুও না দেখানোয় প্রচুর কালচার ঝলকায়, বোধহয়, জানিনে। আর, জোরসে সবাইকে নিজের মত জানানো, মেনলি তখনই যখন সাইলেন্সই কাম্য।    
 
হ্যাঁ আপনার মত থাকতেই পারে। যেমন এই যে আমি ক্যালানেও দু ঘণ্টা আগে পর্যন্ত 'এক্সিস্তেনশিয়ালইজম কি? বিবাদি বাগের মোড়ে তা পাওয়া যায় না কি? খাব না চটকাব?' ন্যায় বিবিধ কোশ্চেনমার্ক ঝুলছিল তা গুগলিয়ে অমনি উধাও, একুন সাত্রে নিয়ে চোখা জ্ঞান শানাব, বিষাদসিন্ধু বেসড ছড়া কাটব কাটব - তা সবই হাতের কাছে নিমেষ ইনফো, আর এই (হু)যুগের উদারি-স্মার্টনেস, খুল্লামখুল্লা। তাকে বৈদগ্ধতার সুমহান লক্ষণ বলে ভাবা উচিত নয়। কারণ একটি বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ধ্যানধারণা অর্জন করে তা নিয়ে বিতর্কে অবতীর্ণ হওয়ার মধ্যে যে গভীর প্রক্রিয়া আছে, তা ঠিক ল্যাদারুস, এম-সি-ক্যু জ্ঞানগাম্বু, ঐ-হল-এক মানসিকতায় সুট করে না। কারণ প্রক্রিয়াটি চাপের, গম্ভীর ও হিসিচেপে বসার মত অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন। কে খাটবে?

তাই আলগোছেই বাতেলা মারি, না হয়। ফ্রি'তে।

_____________
এসআরএফটিআই, হুজুগবাই, ধাঁইধপাধপধাঁই।

No comments:

Post a Comment

Your Thoughts ...